বিশ্বের প্রতি তিনজন নারীর একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় যৌন সহিংসতার শিকার হন—এ রকম ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এদের বড় অংশই নির্যাতিত হয়েছেন স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নারীর প্রতি সহিংসতার হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সংকট এতটাই গভীর যে সংস্থাটি একে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আসন্ন নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্তর্জাতিক দিবসকে সামনে রেখে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৬৮টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—বিশ্বে ৮৪ কোটি নারী তাদের জীবনে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন; অর্থাৎ প্রতি তিনজনে একজন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরেই স্বামী বা সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১ কোটি ৬০ লাখ নারী।
নারীর প্রতি সহিংসতাকে ডব্লিউএইচও জনস্বাস্থ্য সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ডব্লিউএইচওর সহকারী মহাপরিচালক জেরেমি ফারার বলেন, “এ ফলাফল এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিফলন। ভেবে দেখুন—প্রতি তিনজনে একজন নারী। দুই দশকেও এই হার কমেনি। এই সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নারীর শারীরিক, মানসিক, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যে পড়ে। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়ে তাদের সন্তানদের ওপর, এবং শেষ পর্যন্ত পুরো সমাজে।”
তিনি আরও বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি। প্রতিটি সমাজ, প্রতিটি সম্প্রদায় কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত। এমন কাউকে পাওয়া কঠিন, যার চেনা-জানার মধ্যে অন্তত একজন নির্যাতনের শিকার নারী নেই।”
ডব্লিউএইচওর মতে, সমস্যার ব্যাপ্তি ও শেকড় গভীর হলেও এটি প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সমাজেই নারীরা সহিংসতার শিকার হন; বিশেষত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল, অনুন্নত দেশ এবং জলবায়ু সংকট–কবলিত এলাকায় এর হার বেশি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ প্রকল্পে বৈশ্বিক সহায়তা ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরে বরাদ্দ আরও কমেছে।

